গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপের সক্রিয় অংশের ( সুন্দরবনের ) পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব
গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপের সক্রিয় অংশের ( সুন্দরবনের ) পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব
গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার এই তিনটি নদী গঠিত পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের অংশবিশেষ বঙ্গোপসাগরের কোণঘেঁষা সুন্দরবন অঞ্চলটি হল নানান ধরনের ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বাস্তুভূমি যা বাংলাদেশের ছটি জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলার ( উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ) প্রায় ১৩০০ বর্গ কিলোমিটারের অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন সুন্দরবনের আয়তন , ফুল , গাছ , পাখি , উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্য এবং জনবসতির ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে । যেমন –
১. তাপমাত্রার বৃদ্ধিঃ-
পৃথিবীব্যাপী বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়নের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের চিরতুষার-বৃত অঞ্চলে পুরু বরফের স্তর গলে যাচ্ছে এবং একের পর এক হিমশৈল ভেসে আসছে । উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলেও তুষার গলা জলের প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন হিমবাহ পিছিয়ে যাচ্ছে । ১৮৮০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভূপৃষ্ঠ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের গর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস । সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি হল জার অনিবার্য পরিণতি ।
২. সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধিঃ –
হিমবাহ গলা জলরাশি সমুদ্রে জলের যোগান বৃদ্ধি করছে , জার প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে । সমুদ্র বিজ্ঞানীদের পরিমাপ অনুযায়ী ১৯১৩ সাল থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের গর উচ্চতার বৃদ্ধি ঘটেছে +২.৯ মিলিমিটার । একবিংশ শতাব্দীতে বৃদ্ধির এই হার আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে ।
৩. ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধিঃ –
পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১৯৫১ থেকে ২০১০ সালের সময় সীমার মধ্যে সুন্দরবনের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে । সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সমুদ্র সমতলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির দরুন সাইক্লোনের পরিমাণ ও তীব্রতা মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
যদি গ্রীন হাউস এফেক্ট সম্বন্ধে জানতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করুন
গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনার বদ্বীপের সক্রিয় অংশে অবস্থিত সুন্দরবন অঞ্চলে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে তার অনেকাংশেই সমুদ্রের জলে ডুবে যায় । বহু বদ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত সুন্দরবন অঞ্চলের অন্তত তিনটি দ্বিপে বঙ্গোপসাগরের জলস্তর বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পরেছে , যেমন –
১. লোহাচড়া দ্বীপ –
বেশিরভাগ সমুদ্র বিজ্ঞানীদের ধারণা সুন্দরবন অঞ্চলের লোহাচড়া দ্বীপ হল পৃথিবীর প্রথম জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ যা সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির জন্য নিমজ্জিত হয়েছে । বেশ কয়েক বছর ধরে ক্ষয়ের ফলে সঙ্কুচিত হতে হতে ১৯৯৫ সাল নাগাদ দ্বীপটি জলরাশির নিচে বিলীন হয় । ইদানীং উপগ্রহ প্রেরিত দূরসংবেদী চিত্র দেখে অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন ২০০৭ এবং ২০০৯ সালের পর থেকে লোহাচড়ার পুনরুত্থান ঘটছে এবং ভাটার সময় সেখানে অনুচ্চ চর জাগছে ।
২. নিউমুর দ্বীপ –
বঙ্গোপসাগরের একটি জনবসতিহীন ছোট দ্বীপ হল নিউমুর যা বাংলাদেশের তালপট্টি নামে পরিচিত ছিল । ১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের পরে সমুদ্রের বুকে এই দ্বীপটি জেগে উঠেছিল । ২০১০ সাল নাগাদ এই দ্বীপটি আবার নিমজ্জিত হয় , সমুদ্র জলস্তর বৃদ্ধি হল জার মূল কারণ । মৌসুমি বর্ষণের চরিত্র পরিবর্তন এবং সমুদ্র সন্নিহিত এলাকার ক্ষয়কেও অনেকে নিউমুর দ্বীপের নিমজ্জিত হওয়ার অপ্রধান কারণ হিসাবে দায়ী করেন ।
৩. ঘোড়ামারা দ্বীপ –
হুগলী নদীর মোহনার কাছে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র দ্বীপটির আয়তন ১৯৭৫ সালে ছিল ৮.৫১ বর্গ কিমি । ২০১২ সালে যা সঙ্কুচিত হয়ে দাড়ায় ৪.৪৩ বর্গ কিমি । মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে । বিজ্ঞানীদের ধারণা এই অঞ্চলে বার্ষিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে ।
0 Comments