ভূগোলের সংজ্ঞা দিন । সময়ের সাথে ভূগোলের সংজ্ঞার পরিবর্তন আলোচনা করুন । Mission
Geography
WHAT IS GEOGRAPHY |
প্রাচীন গ্রিক পণ্ডিত এরাতস্থেনিস প্রথম Geography শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন ।
তার মতে ‘Geography’ হল পৃথিবীর বর্ননা । দুটি গ্রিক শব্দ ‘Geo’ অর্থাৎ কঠিন , তরল ও বায়বীয়
পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত ‘পৃথিবী’ এবং ‘Graphy’ অর্থাৎ বর্ননা এদের মিলনেই
‘Geography’
শব্দটির উতপত্তি হয়েছিল ।
ভারতে অবশ্য Geography শব্দটির পরিবর্তে ভূগোল শব্দটি ব্যবহার করা হত । তবে প্রাচীনকাল থেকেই দেশ ও
কাল ভেদে পরিবর্তনশিল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভূগোলের সংজ্ঞাও পরিবর্তিত হয়ে চলেছে
। প্রাচীনকাল থেকে ভূগোলের পরিবর্তিত সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করা হল –
· প্রাচীনকালঃ-
DEFINITION OF GEOGRAPHY IN ANCIENT WORLD |
বিখ্যাত রোমান ভূগোলবিদ Strabo , 10 A.D ভূগোলের সংজ্ঞা দেন এভাবে ,
‘ ভূগোল আমাদেরকে পৃথিবীর জলরাশি ও স্থলভাগের সমস্ত জীব সম্পর্কে জ্ঞান দেয় এবং
একই সাথে পৃথিবীর বৈশিষ্ট্যগুলোকে ব্যখ্যা করে ।’
অপর রোমান ভৌগলিক ক্লাউদিয়াস টলেমী এর মতে
‘ভূগোল হল সেই উন্নত বিষয় , যা মহাবিশ্ব মাঝে পৃথিবীর এক ঝলক দেখায়’ ।
প্রাচীনকালের অনেক পণ্ডিতগণই মনে করতেন ‘ পৃথিবীর আকৃতি , ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য ,
বারিমন্ডল এবং এর অধিবাসী ও অন্যান্য জীবের
বৈশিষ্ট্য সমীক্ষা করে ভূগোল । প্রকৃতপক্ষে এইসময় থেকেই ভূগোলের প্রাকৃতিক ও
সামাজিক এই দুইপ্রকার উপাদান ,শক্তি , প্রক্রিয়া ও প্রভাব স্বীকৃতি লাভ করতে শুরু
করে , তবে এইসময় ভৌগোলিকগন খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে সমস্ত জাগতিক বিষয়গুলো ‘ঐশ্বরিক
ইচ্ছার ফল’ হিসাবে ব্যখ্যা দেওয়া শুরু করলে মানুষের মনে নতুন নতুন দেশ সম্পর্কে
জানার আগ্রহ হ্রাস পায় ।
· মধ্যযুগঃ-
GEOGRAPHY IN MEDIEVAL PERIOD |
মধ্যযুগে ভূগোল চর্চায় ব্রতী ছিলেন প্রধানত আরব
দেশের মুসলমান পণ্ডিতগন , তারা দেশ ভ্রমনের সাথে সাথে বর্ননাও করতেন । পঞ্চদশ
শতাব্দীর প্রথমভাগে ভ্যারনিয়াস ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে
ভূগোলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন ‘ ভূগোল হল মিশ্র গনিতের সেই অংশ যা
পৃথিবীর অবস্থা এবং এর অবয়ব , স্থান , বিশালতা , গতি , মহাজাগতিক বৈচিত্র্যতা
প্রভৃতির গুনগত বিভিন্ন অংশের উপর নির্ভর করে ব্যাখ্যা প্রদান করে’ ।
অর্থাৎ তার মতে “ প্রকৃত বা খাঁটি ভূগোল হল
গনিতের একটি অংশ মাত্র , এতে মানুষ ও তার সংস্কৃতির কোন স্থান নেই ।
“Geography is that part of mixed
mathematics , which explains the state of the earth and of its parts depending
on quality . viz its figure , place , magnitude and motion with the celestial
appearance etc.”
তবে ভূগোলের সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া নিয়ে ভৌগোলিকদের মধ্যে অস্বচ্ছতার
শুরু হয় ভ্যারোনিয়াসের সময় থেকেই । এর পরবর্তীকালে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে
জার্মান পণ্ডিত ইমানুয়েল কান্ট এর মতে “ভূগোল হচ্ছে পৃথিবীর সমীক্ষা । এটি পৃথিবীর
বিভিন্ন অংশের বিভিন্নতা ব্যাখ্যা করেও থাকে” । ( Geography is the ready of the
earth. In it incidents and active relation are considered specially important.
) তার মতে মানুষ ও প্রকৃতি তখনই ভূগোলের বিসয়বস্তু রুপে গন্য
হবে যখন তারা একত্রিত হয়ে সম্পর্কযুক্ত হবে । তিনি আরও বলেছিলেন ‘কাল’(Time) হল ইতিহাসের বিষয়বস্তু এবং
‘দেশ’(Space) হল ভূগোলের । অর্থাৎ ইতিহাস
কালিক ক্রমপর্যায় (Temporal Sequence) আলোচনা করবে এবং ভূগোল করবে স্থানিক ঘটনাগুলির
আলচনা ।
· আধুনিক যুগঃ-
GEOGRAPHY IN MODERN PERIOD |
উনবিংশ শতাব্দীতেই আধুনিক ভূগোলের জয়যাত্রা শুরু
হয় দুই জার্মান ভৌগলিক পণ্ডিত আলেকজান্ডার হামবোল্ট এবং রিটারের নেতৃত্বে । এই
দুজনকেই ধ্রুপদী ভূগোল বা আধুনিক ভূগোলের জনক বলা হয় ।
হামবোল্টের মতে (A Humboldt ) ভূগোল হল আদি বিজ্ঞান , যা
কেবলমাত্র প্রাকৃতিক ও জীববিজ্ঞান থেকে তথ্য আহরন করে না , তার মতে Geography is the
science related to neture..in it are studied and described all things found on
earth. অর্থাৎ ‘ভূগোল হচ্ছে প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান , পৃথিবীতে যা কিছু দেখা
যায় তার সমীক্ষা ও বর্ননা এতে করা হয়’ ।
আবার কার্ল রিটার (Carl Ritter ) এর মতে “Geography is the
department of science that’s deals with the goal in all its features, phenomena
and relation as an independent unit and
shows the connection of this unified whole with man and with man’s
creator.” অর্থাৎ ভূগোল হল বিজ্ঞানের সেই শাখা যা পৃথিবীর সমস্ত অবয়ব , বৈচিত্র্য এবং
সম্পর্কসহ একটি স্বতন্ত্র একক হিসাবে বিচার করে এবং মানুষ ও মানুষের স্রস্টার সাথে
এই সার্বিক ঐক্যের যোগ দেখায় ।
তবে হামবোল্ট ও রিটারের যে বক্তব্যটি আধুনিক
ভৌগলিকরা মেনে নিয়েছেন একবাক্যে তা হল ভূগোল ই হল আদি , মাতৃসম শাস্ত্র , যা থেকে
উদ্ভুত হয়েছে ভু আকৃতি বিজ্ঞান , আবহবিজ্ঞান , মৃত্তিকা বিজ্ঞান , উদ্ভিদ ভূগোল ,
আঞ্চলিক বিজ্ঞান ইত্যাদি বিশেষায়িত শাখা ।
১৮৭৭ সালে ফরাসী ভৌগলিক ভিদাল দ্য লা
ব্লাশে (Vidal de la Blache ) এর মতে “Geography is the science of place , not man” অর্থাৎ ভূগোল হল স্থানের
বিজ্ঞান মানুষের বিজ্ঞান নয় ।
১৯৫৯ সালে মার্কিন ভৌগোলিক রিচার্ড হার্টশোর্নের
(
Rechard Hartshone ) এর মতে “Geography is concerned to provide an accurate
orderly and rational description and interpretation of the variable character
of the earth’s surface.” অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তনশীল ও বৈচিত্র্যময় চরিত্রের
নির্ভুল , নিয়মবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যখ্যা দেওয়াই ভূগোলের কাজ ।
হার্টশোনের চিন্তাধারার সম্পুর্ন বিরোধী স্কিফার
(Schaefer
) বলেন , “ ভূপৃষ্ঠে
বিশেশ বিষয়ের দৈশিক বণ্টন সংক্রান্ত সুত্র গড়ে তলে এমন বিজ্ঞানই হল ভূগোল”। তার এই চিন্তাধারাকে ‘নিয়মস্থাপনকারী’
আখ্যা দেওয়া হয় , তিনি বলেন দৈশিক বিজ্ঞান হিসাবে ভূগোলের মূল বিষয় হল দেশ ।
ব্রিটিশ ভৌগোলিক উলড্রিজ ও ইস্ট ( S W Wooldrige
and W. Gordon East , 1951 ) বলেন “Geography concerns land and man.”
১৯৬২ সালে মার্কিন ভৌগোলিক উইলিয়াম বাঙ্গে (W. Bange) বলেন “Geography is
the science of location.” অর্থাৎ ভূগোল হল অবস্থানের বিজ্ঞান ।
১৯৬৩ সালে অপর মার্কিন ভৌগোলিক আকারম্যান (Edward A.
Ackerman) বলেন “ পৃথিবী
পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক পরিবেশে সব মানবীয় বিষয়াদির সম্মিলিত বিশাল মিথস্ক্রিয়া পদ্দতির
উপলব্ধি ছাড়া ভূগোলের অন্য কিছুই লক্ষ্য নেই , তিনি আবার ১৯৬৫ সালে বলেন “Geography is the
study of spatial distribution and space relations of the earth’s surface.”
ব্রিটিশ ভূগোলবিদ এল ডাডলে স্ট্যাম্প (L . Dudley
Stamp) তার অভিধানে ভূগোলের সংজ্ঞা দেন এভাবে – “Geography is the science of human
circumstance. It describe the earths surface. Its inhabitants and discuses
about the relation of different area.” অর্থাৎ ভূগোল হচ্ছে মানুষের পরিস্থিতিগুলোর
বিজ্ঞান , যা ভূপৃষ্ঠের তথা এর উপর বসবাসকারী অধিবাসীদের বর্ণনা দেয় এবং
এলাকাগুলোর সম্বন্ধে আলোচনা করে।
আবার মংকহাউস ( E.J.Monkhouse ) তার ভূগোলের অভিধানে বলেছেন
মানুষের আবাস স্থল হিসাবে ভূপৃষ্ঠের স্থানিক পারথক্যীকরণ সমীক্ষা করা নিয়ে ভূগোল
গড়ে উঠেছে ।
মার্ক্সবাদী ভৌগোলিক পিটের (Peet ) এর মতে একটি সম্পুর্ন
বিজ্ঞানের যে অংশ একদিকে সামাজিক প্রক্রিয়া এবং দৈশিক প্রক্রিয়া এবং দৈশিক
প্রক্রিয়াগুলির পারস্পরিক সম্বন্ধ নিয়ে আলোচনা করে তাই হল মার্ক্সিয় ভূগোল ।
সুতারাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় বেশিরভাগ
ভৌগোলিকদের প্রদত্ত সংজ্ঞায় মিল না থাকলেও মূল কথা হল পৃথিবী , মানুষ এসবের
আলোচনাই হল ভূগোলের প্রধান আলচ্য বিষয় । যার পরিধি সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে
, আর ভূগোল হয়ে উঠেছে এক সাংশ্লেষিক বিষয়
।
( এই লেখাটির দ্বারা ভূগোলের ছাত্র ছাত্রীরা সামান্যতম উপকৃত হলে কমেন্ট করে জানাবেন ! )
0 Comments